প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে লালমনিরহাটে তামাক চাষিদের মানববন্ধন

মেহেদী হাসান জুয়েল ||
দেশীয় মালিকানাধীন সিগারেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত লাখো শ্রমিকের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এবং তামাক শিল্প বাঁচিয়ে রাখার দাবিতে লালমনিরহাটে তামাক চাষিরা মানববন্ধন করেছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় লালমনিরহাটের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ৫ উপজেলার কৃষকরা রাস্তায় দাড়িয়ে মানববন্ধন করেন।

কৃষকেরা বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন

এসময় কৃষকরা দেশের বেশিরভাগ তামাক চাষির রুটি-রুজি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার আহবায়ক মো:অহেদ আলীর সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে বিদেশি মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন তামাক শিল্প রক্ষা, দেশীয় তামাক শিল্প রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইনের সঠিক বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া তামাক চাষের উপযোগী। ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না করতে পারায় আজ আমরা ঠিকমত তামাক চাষ করতে পারছি না। দেশীয় কোম্পানিগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারলে তামাকের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নতুন-নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে; যা দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখবে।

মানববন্ধনের একাংশ

সমাবেশ থেকে দেশের প্রায় ৩০টি কোম্পানির সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তামাক চাষীদের রুটি-রুজি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।

সমাবেশে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানিতে কর্মরত কর্মচারী ও তামাক চাষীরা অভিযোগ করেন, শুধু নীতি সহায়তা না থাকার কারণে শতভাগ দেশীয় সিগারেট কোম্পানির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। অথচ এ দেশের অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আদি ব্যবসা তামাক। বর্তমানে দেশের ৩০টি কোম্পানিতে কর্মরত ও তামাক চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ শ্রমিকদের রুটি-রুজি আজ হুমকির মুখে।

তারা বলেন, বিদেশী মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করে শতভাগ দেশীয় মালিকাধীন তামাক শিল্প রক্ষা করতে হবে। দেশীয় তামাক শিল্প রক্ষায় এখনই প্রতিযোগিতা আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও দেশের টাকা দেশে রাখতে শতভাগ দেশীয় মালিকাধীন তামাক শিল্প রক্ষার দাবি জানান তারা।

কর্মসূচিতে বিভিন্ন ব্যানার -ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে চাষিরা। যাতে লেখা ছিলো, ‘দেশীয় তামাক শিল্প রক্ষায় এখনই প্রতিযোগিতা আইনের সঠিক বাস্তবায়ন চাই’, ‘নিম্ন স্ল্যাবের সিগারেট উৎপাদনে বিদেশী কোম্পানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে’, ‘দেশের টাকা দেশে রাখুন- শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন তামাক শিল্প রক্ষা করুন’, ‘বিদেশী মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করুন- শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন তামাক শিল্প রক্ষা করুন’, ‘তামাক শিল্পের বাজেট কি শুধুই বিদেশীদের সুবিধার্থে?’, ’শতভাগ দেশীয় তামাক শিল্প সরকার না কি বিদেশী কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে?’

তামাক চাষিরা বলেন, সরকার শতভাগ দেশীয় কোম্পানির বিনিয়োগ সুরক্ষায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে দুটি মূল্যস্তর সৃষ্টি করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানির জন্য নিম্ন স্তর সংরক্ষিত রেখে বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে মধ্যম ও ঊচ্চমানে উন্নীত করে।

তারা আরও বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির দখলে এখন ৯০ ভাগ সিগারেটের বাজার। সেখানে দেশীয় কোম্পানীর জন্য গৃহীত পদক্ষেপ অজানা কারণেই বাস্তবায়ন না হওয়ায় শতভাগ দেশীয় তামাক শিল্পকে কৌশলে হত্যা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ায় নকল সিগারেট বাজারে প্রবেশ করছে, এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

তামাক শিল্পে অবিলম্বে ৪০ শতাংশ মনোপলি আইন কার্যকর করা, একচেটিয়া বিদেশি তামাকের বাজার হটিয়ে দেশি তামাক শিল্পে প্রতিযোগিতামূলক আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান দেশীয় তামাক চাষিরা।