মেহেদী হাসান জুয়েলঃ অবশেষে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফরের কঠোর মনোভাবে রক্ষা পেল ৪ কোটি টাকার নবনির্মিত স্কুল ভবনটি। সেই সাথে রক্ষা পেল ভাংগন কবলিত এলাকাটি।
পাঁচ দিন আগেও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল তিস্তা। হু হু করে বাড়ছিল পানি। সেই পানি তিস্তা ছাপিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পরেছিল। নদী সংলগ্ন কোন কোন বাড়িতে কোমড় অবদি পানি উঠেছিল। এক পর্যায়ে পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ছুঁয়ে যায়।
গত পরশু থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করলে শুরু হয় দ্বিতীয় দফা নদী ভাংগন। আবারো বসতবাটি নদী গর্ভে যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়ি সহ কয়েক শো একর ফসলি জমিকে গ্রাস করে ফেলে তিস্তা। এক পর্যায়ে চরম হুমকির মুখে পরে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চোংগাদাড়ায় অবস্থান করা নব নির্মিত কালমাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা স্কুল ভবন। যেটি আজ জেলা প্রশাসক আবু জাফরের কঠোর হস্তক্ষেপে রক্ষা পেতে চলছে।
এর আগে কোরবানী ঈদের ভোর থেকে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভাংগন শুরু হয়। সেদিন ঈদ বাদ দিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছিলেন অসহায় মানুষগুলো। তাদের আর্তনাদে আকাশ ভারী হয়ে গিয়েছিল। একে একে ১০ টি বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যায়। ফিকে হয়ে যায় খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ঈদ উৎসব।
খবর পেয়ে লালমনিরহাট নিউজ২৪ এবং বাংলাভিশন দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে সরেজমিনে নদী ভাংগনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও আগে থেকেই ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছিল। তারা নদীর অন্যান্য জায়গায় জিও ব্যাগ ফেললেও আধা কিলোমিটার এলাকায় ফেলেনি। দুই অংশে ফেলে মাঝখানের আধা কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ না ফেলার কারনেই ওই এলাকার ১০ টি বাড়ি ও কয়েক একর ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যায়।
ঈদের দিনে ওই অঞ্চলের মানুষ অভিযোগ করে বলছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ভেঙে যাওয়া ওই আধা কিলোমিটার এলাকায় ১০/১২ টি ব্যগ ফেলে অন্য এলাকায় চলে যায়।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ভাংগন কবলিত অঞ্চল এবং চরম হুমকির মুখে থাকা বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য ছুটে যান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে জিও ব্যাগ ফেলা নিশ্চিত করেন।
এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার পর রাতে জেলা প্রশাসক ওই স্থান ত্যাগ করেন।

নদী ভাংগন এলাকার মানুষ জানান, ডিসি স্যারের জন্য আজ আমাদের এলাকাটি রক্ষা পেল এবং ৪ তলা স্কুল ভবনটি রক্ষা পেল।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিস্তায় বন্যার পানি কমার সাথে সাথে এই এলাকায় নদী ভাংগন দেখা দেয়। পাশেই একটি স্কুল ভবন রয়েছে, যেটি বর্তমানে হুমকির মুখে। এটা ভেঙে গেলে স্কুল এবং অনেক বাড়ি ঘর ভেঙে যাবে। এতে তারা ভুমিহীন এবং গৃহহীন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের আস্বস্ত করেছেন। ভাংগন রোধে দ্রুত জিও ব্যাগ তারা ফেলবেন।
এটা রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করবো।(সন্মানিত পাঠক|| লালমনিরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু অসংগতির চিত্র আমাদের হাতে এসেছে। এসব ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে তুলে ধরবো আপনাদের সামনে। আমাদের সংগেই থাকুন)