চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির অভিযোগ

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে টিসিবির মাধ্যমে তিন স্থানে ওই ইউনিয়নে পরিবার (ফ্যামিলি) কার্ডের পণ্য সামগ্রী বিতরণকালে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের তপন রায় নিয়মিত টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে তার নিজের বা পরিবারের কারও নামে ফ্যামিলি কার্ড নেই। দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন স্বাক্ষরিত কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের শান্ত সোনা খোকন ও তালগাছি গ্রামের রোকেয়া খাতুন এবং দাইন্যা গ্রামের শাহজাহান মোল্লার কার্ড দিয়ে নিয়মিত পণ্য সংগ্রহ করে নিজস্ব গোডাউনে মজুদ করেছেন। একই গ্রামের স্বপন রায়ের কাছেও রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্যামিলি কার্ড। এ ছাড়া অপর ভাই দিলীপের নিজের নামে দেওয়া হয়েছে দুইটি কার্ড।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন ও ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী এলাকার তপন রায় ও স্বপন রায়সহ কয়েকজন ব্যক্তির সহযোগীতায় অন্য ইউনিয়নের কার্ড ব্যবহার করে টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো মজুদ করে কালোবাজের বিক্রি করেন। গতকাল এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদসহ কয়েকজন নেতাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয়করণের ভিত্তিতে ওই ফ্যামিলি কার্ডগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে আবেদন করেও প্রকৃত হতদরিদ্ররা কার্ড না পেলেও স্থানীয় ধনী ও ব্যবসায়িদের অনেকেই পেয়েছেন ফ্যামিলি কার্ড। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে তপন রায় কিভাবে কাকুয়া ইউনিয়নের তিনজন মুসলিম পরিবারের কার্ড ব্যবহার করে টিসিবি পণ্য সংগ্রহ করছেন?

অভিযুক্ত তপন রায় বলেন, দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী তাদের ওই কার্ড করে দিয়েছেন। তাদের আইডি কার্ডের পরিবর্তে ওই কার্ড গুলো তাদের দেওয়া হয়েছে। তবে পণ্য সংগ্রহ করে মজুদ রাখার বিষয়ে অস্বীকার করেন তপন রায়।

দাইন্যা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর আবুল কালামের অভিযোগ, পরিবার কার্ডের আবেদন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। তবে তিনি এখনও কার্ড পাননি। ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় অন্য ইউনিয়নের ভোটার আইডি কার্ডে হিন্দু পরিবারগুলো ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন।

কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের শান্ত সোনা খোকন জানান, কাকুয়া ইউনিয়নের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে কিভাব দাইন্যা ইউনিয়নে পরিবার কার্ড হলো সে বিষয়টি জানেন না। তার এনআইডি নম্বর ৬৪৪০০৭২২৭২ ও তালগাছি গ্রামের রোকেয়া খাতুন, এনআইডি নম্বর ৫৯৭১৪৯৫২৫৩ এবং দাইন্যা গ্রামের শাজাহান মোল্লা। তার এনআইডি নম্বর ১৯৬৯৯১১৯৫১৯৪৭১৫৯৮।

দাইন্যা ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী জানান, দলীয়করণের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও পরিবার কার্ডের জন্য ইউনিয়নে আবেদন এসেছিল ১৮০০টি। তবে কার্ড এসেছে মাত্র ১৩৫৬টি কার্ড। এ কারণেই অনেকের নামে কার্ড হয়নি।

চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন জানান, পরিবার কার্ডের আবেদনের শুরু থেকেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অন্য ইউনিয়নের এনআইডি থেকে তার ইউনিয়নে কিছু পরিবার কার্ড হয়েছে। তবে এগুলো কিভাবে স্বাক্ষর করলেন এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) রানুয়ারা খাতুন জানান, নামের তালিকাগুলো ইউপি চেয়ারম্যানগণ দিয়েছেন। এ ছাড়াও পণ্য গুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের দায়িত্ব তাদের। কেন আর কিভাবে এটি হলো সে ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।